মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনাদের গোলাম হয়ে থাকতে চাই- ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
আজিজুর রহমান মুন্না, সিরাজগঞ্জঃ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমি হাসিনার জেলে যাবনা। যদি যায়, তাহলে আমার লাশ যাবে। আজ আমি বাড়ির ভাত খাচ্ছি, আল্লাহ কতো মহান। আজ আমি আপনাদের মাঝে এসে কথা বলছি। আপনাদের ভালবাসার গোলাম হয়ে গিয়েছি। আমি আপনাদের গোলাম, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনাদের গোলাম হয়ে থাকতে চাই।
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে শহীদ হওয়া আব্দুল আলীম ও সোহানুর রহমান রঞ্জুর স্মরণে সিরাজগঞ্জ সদরের পাইকপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সদর উপজেলা বিএনপি আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগের আমলে ভোটের অধিকার ১৪ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষ ভোট দিতে পারেন নাই। সংসদ বা ইউপি নির্বাচন কোনো জায়গাতেই ভোট দিতে পারেননাই। খুন, লুট রাহাজানি, বাংলাদেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। আজকে এখানে মিটিং করতে পারছি। কিন্তু মিটিং করার সময় স্মরণ করতে হয়, আ.লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন সয়বাদের বাঐতারা ও কালিয়া হরিপুরের মাটি বিএনপি নেতাকর্মীদের রক্তে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তাদের লাশ দেখার। তাদের হাত-পায়ের নখ তুলে ফেলেছিল, মুখের দাঁত তুলে ফেলেছিল। তারা ১৬টা বছর আমার বাংলাদেশের মানুষের ওপরে নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালিয়েছিল।
টুকু বলেন, আপনারা শুনেছেন আংগুল ফুলে কলাগাছ হয়। সয়দাবাদ ইউনিয়নের মুলিবাড়ি গ্রামের নবীদুল। ট্রাকের হেলপার ছিল, হেকপারও নয়, বেলচা দিয়ে ট্রাকে মাল লোড করতো। ভ্যান গাড়ি চালাতো। সেই নবীদুল নাকি চেয়ারম্যান হয়ে ৫০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে। দুইটা ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়েছে। সিরাজগঞ্জে এক রাজা ছিল। সেই রাজা বলতো টুকু যেন সাদা না থাকে, রক্তে লাল হয়ে যায়। এরপর এই নবীদুল বাহিনী আমি সিরাজগঞ্জে আসার পথে রামদা নিয়ে বসে থাকতো। মনে হতো, আমি এই শহরের মানুষ না, এই শহরে থাকিনা, ট্যাক্সও দেইনা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমার মিসেস যখন নির্বাচন করেন সেই ২০১৮ সালে তাকে গুলি করা হয়েছিল, এখনো তার শরীরে গুলি আছে। দুজনকে গুলি করে চোখ অন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই নির্যাতন করা হয়েছে, এই নির্যাতন আলাহও সহ্য করেন না। এই বনবাড়িয়ায় মোটরসাইকেলে তারা বোম মেরে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপরে দোষ চাপিয়েছে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আরও বলেন, আজকে এই হাসিনার নির্যাতন আল্লাহ-ও সহ্য করেন নাই। আল্লাহ বলছেন, আমি নির্যাতনকারীকে নির্যাতন করতে দেই, দেখি কতটুকু করতে পারে। আজ হাসিনা হেলিকপ্টারে পালিয়েছে।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অহংকার করবেন না। অহংকার করলে কি হয় তা হাসিনার পরিনতি দেখে শেখেন। যারা আমাদের বের হতে দেয় নাই, টুকুকে আসতে দেয় নাই, আজ তারা সবাই পালিয়েছে। এটা নিয়তি, এটাই রাজনীতি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস.এম নাজমুল ইসলামের পরিচালনায় ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরকার মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রমুখ।
এসময় জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবু, ছাত্রদল সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
স্মরণসভা শেষে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে শহীদ আব্দুল আলীম ও সোহানুর রহমান রঞ্জুর পরিবারকে ব্যাক্তিগতভাবে এক লাখ টাকা করে দেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সিরাজগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান রঞ্জু, ছাত্রদলের সদস্য মো. সুমন ও যুবদলের কর্মী আব্দুল লতিফ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত (২২ আগস্ট) রাতে নিহত রঞ্জুর স্ত্রী পৌরসভার মাছুমপুর মহল্লার মৌসুমী খাতুন, ছাত্রদলের কর্মী নিহত সুমনের বাবা শহরের গয়লা মহল্লার গঞ্জের আলী এবং একই মহল্লার নিহত যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফের বোন মোছা. সালেহা খাতুন বাদী হয়ে তিনটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। একইদিন আন্দোলনে ধাওয়ার মুখে মৃত্যুবরণ করেন আব্দুল আলীম