• বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
Headline

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ব্যস্ততা বেড়েছে কম্বল তৈরির কারিগরদের

Reporter Name / ২১ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

সিরাজগঞ্জে শীতের আগমনে ব্যস্ততা বেড়েছে কম্বল তৈরির কারিগরদের
স্টাফ রিপোর্টারঃ- শীতের আগমনে সিরাজগঞ্জের যমুনা উপকূলে কাজিপুর উপজেলায় কম্বল তৈরির শিল্পীরা কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ‘কম্বল পল্লী’ নামে পরিচিত এই অঞ্চলের শিমুলদাইড় বাজার, ছালাভরা গ্রাম এবং কাজিপুরের প্রায় ২০-২৫টি গ্রামের প্রায় ৪০-৫০ হাজার কারিগর এবং তাদের পরিবার দিনরাত কাজের চাপে রয়েছে। প্রতিবছরের মতো, এবারও নিম্ন আয়ের মানুষরা নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

বাড়তি আয়ের সুযোগে কম্বল তৈরির এই কাজের চাপ বৃদ্ধি প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে বলে জানান শিমুলদাইড় বাজারের মোঃ মনসুর এবং একই গ্রামের হানিফ। শিমুলদাইড় বাজার, কুনকুনিয়া, বড়শিভাঙ্গা, শ্যামপুর, গাড়াবেড়, মাইজবাড়ি, চালিতাডাঙ্গা, মেঘাই, নয়াপাড়া এবং গাঁন্ধাইলসহ প্রায় ২০-২৫টি গ্রামের ২০ হাজার পরিবার গার্মেন্টসের ঝুঁট কাপড় বা টুকরো কাপড় দিয়ে কম্বল প্রস্তুত করছেন। কম্বল তৈরির শ্রমিক আলেয়া জানাচ্ছেন, প্রতিদিন একটি পা মেশিনের সাহায্যে একজন শ্রমিক ২-৩টি কম্বল তৈরি করছে। প্রতিটি কম্বল তৈরি করার জন্য মজুরি ৩০-৭০ টাকা দেয়।

কারিগর শাহিনুর বেগম জানিয়েছেন, ফ্লাডলক মেশিন ব্যবহার করে তিনি বেশি পরিমাণ কম্বল তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। যদিও মেয়েদের মজুরি কম, তবে শীত মৌসুমে পরিবারের কাজের মধ্যে থেকে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কম্বল সেলাই করে অভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। রাজিব শিমুলদাইড় বাজারে ফ্লাডলক মেশিন চালান, সেখানে তার দৈনিক আয় ১.৫ থেকে ২ হাজার টাকা। এর মাধ্যমে পরিবারের খরচ কাটছাট ছাড়া ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে সমস্যা হয় না। মাইজবাড়ি এবং কুনকুনিয়া গ্রামে প্রায় ১৬-১৭ হাজার পা মেশিন রয়েছে, আর শিমুলদাইড় বাজারে প্রায় ৩শ ফ্লাডলক পাওয়ার মেশিন আছে। প্রত্যেক দিন ওই মেশিনগুলোতে ১ হাজার থেকে ১২শ পিস কম্বল তৈরি হয়। প্রতিটি কারিগর ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা আয় করে, বলে জানান শ্রমিক মান্নান।

মায়ের দোয়া ট্রেডার্সের মালিক মোঃ মনসুর জানান, বাংলাদেশি কম্বল ৭০ থেকে ৩০০ টাকায় এবং চায়না কম্বল ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়। তার কারখানায় ২০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিটি শ্রমিক দৈনিক ৬-৭০০ টাকা আয় করেন। তিনি আরো জানান, বছরে কম্বল ব্যবসা ৩ থেকে ৪ মাস চলমান থাকে।

বাজার সমিতির সভাপতি গোলাম রব্বানি এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ জানাচ্ছেন, ১৯৯৪ সালে এই এলাকায় সাইদুল নামের একজন প্রথম গার্মেন্টসের ঝুঁট কাপড় দিয়ে কম্বল তৈরি শুরু করেন। আজ এখানে কম্বলের পাশাপাশি ছোট ছেলেমেয়েদের গরম কাপড়ের পোশাকও উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলার মহাজনরা এসে ক্রয় করেন। এক সময় এই ব্যবসা স্থানীয় পর্যায়ে থাকলেও এখন এর পরিধি বেড়ে জারী দেশব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। যমুনার ভাঙ্গনের কবলে পড়া এই এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কম্বল তৈরির কারখানাগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাবরিন আক্তার জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উন্নতির জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। শীতকালীন সময়েও শিমুলদাইড় বাজারে প্রায় শতকোটি টাকার ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। তবে ব্যাংক না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের ঝামেলা পোহাতে হয়।

কম্বল তৈরির ব্যবসা অনেক বেকারত্ব দূর করেছে বলে সচেতন মহল মনে করেন।


আপনার মতামত লিখুন :
More News Of This Category